নারায়ণগঞ্জে ফের ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে কোভিড-১৯। ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ খানপুর কোভিড হাসপাতালের ১০টি আইসিইউসহ ১১০টি সাধারণ শয্যায় পরিপূর্ণ করোনা আক্রান্ত রোগীতে। শয্যার অভাবে অনেক রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার বেশির ভাগ রোগীর স্বজনরাই হাসপাতালের জন্য রাজধানীতে ছোটাছুটি করছেন।
আগামী কয়েক দিন করোনার এই প্রকোপ অব্যাহত থাকলে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে তা নিয়ে শঙ্কিত স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত রোগীদের এই চাপ সামলাতে ইতিমধ্যেই প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি করে শয্যা বৃদ্ধি করেছেন।
তবে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে নারায়ণগঞ্জে এখনই আইসিইউ সুবিধাসহ একটি বড় ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হোক।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জুনের ১ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট মৃত্যু সংখ্যা ছিল ২১৭ জন, যা গত ৩০ জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় ২২৩ জনে। কিন্তু পরবর্তী মাসের তথা পুরো জুলাই মাসে (৩১ জুলাই পর্যন্ত) জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ২৫৯ জন। অর্থাৎ জুন থেকে জুলাই মাসে মৃত্যু বেড়েছে ৭ গুণ।
অপরদিকে যেখানে জুন মাসের ৩০ দিনে পুরো জেলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৩৫ জন, সেখানে ১ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত (৩০ দিনে) আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬০০ জন। এ একমাসের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯ গুন বেড়েছে।
গত ২ দিনে নারায়ণগঞ্জ খানপুর কোভিড হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছেন কানায় কানায়। অনেকে বাধ্য হয়ে মেঝেতেই অতিরিক্ত বেড দিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা রোগীরা শয্যা না পেয়ে তাদের স্বজনরা জেলা বা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খবর নিচ্ছেন।
খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবুল বাশার বলেন, আমাদের হাসপাতালের ১২০টি সিট (আইসিইও ১০টিসহ) সব পূর্ণ। একটা সিট খালি হলে ৪-৫ জনের সিরিয়াল থাকছে। রোগী জায়গা দিতে না পেরে আমরাও কষ্টে আছি।
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে এখনই ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, যেভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির কোনো বিকল্প নেই।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান জানিয়েছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ তলা বিশিষ্ট সিজেএম ভবনটি কয়েক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আমি অনেক দিন ধরেই ওই ভবনটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরির জন্য দাবি করে আসছিলাম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীও কথা দিয়েছেন ওই ভবনটিকে হাসপাতালে রূপ দেওয়ার ব্যাপারে।
তিনি বলেন, যেহেতু নারায়ণগঞ্জে করোনা রোগীদের আমরা শয্যা ও চিকিৎসা দিতে পারছি না, সেহেতু ওই ভবনটিকে ফিল্ড হাসপাতালে রূপ দেয়া গেলে শত শত জীবন বাঁচবে বলে আমরা আশা রাখি।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল জানিয়েছেন, করোনা চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জের সব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান এমপির নেতৃত্বে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা নিজ তহবিল থেকে খানপুর কোভিড হাসপাতালের অভ্যন্তরে আরেকটি বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের জন্য টাকাও দিয়েছিলেন, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে সেটি সম্ভব হয়নি। ওই ভবনটি হলে এখন এ মহাসংকটে পড়তে হতো না আমাদের।
চেম্বার সভাপতি বলেন, রাজধানী ঢাকায়ও বেশির ভাগ করোনা হাসপাতালে সিট নেই। এই পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে ফিল্ড হাসপাতাল অত্যাবশ্যক।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ জানিয়েছেন, যেহেতু খানপুর কোভিড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট হয়েছে, সেহেতু অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হওয়ার কথা না। পাশাপাশি এই হাসপাতালে কয়েকশ অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে বলেও আমরা দেখেছি। তাই অব্যবহৃত সিজেএম ভবনটিকে ফিল্ড হাসপাতাল হিসেবে তৈরি করলে কমপক্ষে ৫০০ শয্যার কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা সম্ভব। তবে সবই সিদ্ধান্তের ব্যাপার এবং মনিটরিংয়ের বিষয়।
এ ব্যাপারে জেলা করোনা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, আমরা উপজেলা কমপ্লেক্সগুলোতে ১০টি করে শয্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। এরপরও যদি পরিস্থিতি খারাপ হয় তবে সিজেএম ভবনটিতে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
Array