সিলেটে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এখন ভয়ানক। মৃত্যুর ঘোড়া ছুটছে লাগামহীন। সংক্রমণও ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই সিলেটে। রয়েছে অক্সিজেন সংকটও। জেলায় একদিনে করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ৭১০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে জরুরি সভা ডেকেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মেয়র আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
সভা শেষে বেলা ২টার দিকে সাংবাদিকদের সিসিক মেয়র জানান, সভায় সিলেটের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে। সিলেটের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে সভায় উপস্থিত সবার সম্মতিক্রমে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়ে।
তিনি জানান, সিলেটে যেসব কোম্পানি অক্সিজেন সরবরাহ করে তাদের সাপ্লাইয়ের পরিমাণ বাড়াতে বলা হয়েছে। এনিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে অক্সিজেন কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অক্সিজেন সঞ্চালন প্লান্টের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
মেয়র বলেন, সভায় জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে- যাতে জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে যতটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন ততটা কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। এছাড়া সিসিকের সব জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে নগরীর প্রতি ওয়ার্ডে মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালানো হবে। বুধবার থেকেই এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
মেয়র আরিফ বলেন, সিলেট জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। রোগীরা যদি উপজেলা পর্যায়ে সেবা পেয়ে যান তবে ওসমানী মেডিকেল ও শামসুদ্দিন হাসপাতালসহ নগরীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেকটা কমে যাবে। নগরীর প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে মানবিক আকারে বিল আদায়ের জন্য সভায় কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সভায় সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক দুলাল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে বিভাগে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১২ জন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে সিলেট জেলার ১০ জন এবং হবিগঞ্জ জেলার ২ জন রয়েছেন। এ নিয়ে সিলেট বিভাগে করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৭২৮ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৫৮১ জন, সুনামগঞ্জে ৫২ জন, হবিগঞ্জে ৩৪ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৬১ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মোট পরীক্ষার ৩৪.৭৯ শতাংশেরই করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সিলেট জেলায় শনাক্তের হার ৩৩.৯৭ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ২৮.৭১ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৪৬.৭৯ শতাংশ এবং মৌলভীবাজারে ২৯.৬৩ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়া ৭১০ জনের মধ্যে ৪০৬ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জের ৮৭ জন, হবিগঞ্জের ১৫৩ জন এবং মৌলভীবাজার জেলার ৬৪ জন।
এ নিয়ে বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ২২১ জন, সুনামগঞ্জে ৪ হাজার ৯০৫ জন, হবিগঞ্জে ৫ হাজার ৭৬ জন ও মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৮১৩ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, শেষ ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১২৩ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৯৯ জন, সুনামগঞ্জে ৭ জন, হবিগঞ্জে ১৩ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৪ জন রয়েছেন। এ নিয়ে বিভাগে আজ সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৬৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর মধ্যে সিলেট জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩৭ জন, সুনামগঞ্জের হাসপাতালে ৬২ জন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে ৪৫ জন ও মৌলভীবাজারের হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৩৫৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থদের মধ্যে ২৫৬ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ২৯ জন, হবিগঞ্জ জেলার ২৩ জন এবং মৌলভীবাজার জেলার ৫১ জন রয়েছেন।
বিভাগে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৬৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২১ হাজার ৬৬৬ জন, সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৪২৩ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২ হাজার ৫৮০ জন ও মৌলভীবাজারে ৪ হাজার ২ জন সুস্থ হয়েছেন।
Array