নিজস্ব প্রতিনিধি : এবার একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি বিশেষ কোটা — ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা। শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম। ভর্তি ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া তিন ধাপে সম্পন্ন করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের শিক্ষার্থীরা এই বিশেষ কোটার আওতায় আসবেন। ইতোমধ্যে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড থেকে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রমেই এটি কার্যকর হবে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কোটায় শহীদদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে মোট ৭ শতাংশ কোটা চালু রয়েছে, যার মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরের জন্য বরাদ্দ। তবে বর্তমানে কলেজ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, এবং উচ্চ আদালতের রায়ে নাতি-নাতনিদের কোটা বাতিল হয়েছে। তাই কোটা ব্যবস্থার বাস্তবতা বিবেচনায় পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের এক পরিদর্শক জানান, “মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সংখ্যা কলেজ পর্যায়ে এখন খুবই কম। তাই বাস্তবসম্মত ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নতুন কোটার প্রয়োজন ছিল। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভর্তির নীতিমালায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আসতে পারে।”
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে জানান, ২০২৫ সালের একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় কোটাব্যবস্থা, মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তির অগ্রাধিকার, মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া ও বেসরকারি কলেজগুলোর সংকট বিবেচনায় নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নতুন নীতিমালায় ভর্তির সময়সীমা নির্ধারণ, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার প্রতি উৎসাহ এবং নিম্নমানের কলেজগুলোর সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। ব্যানবেইস ও শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদরাসায় রয়েছে প্রায় ২২ লাখ আসন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রয়েছে আরও ৯ লাখ আসন, এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার আসন।
সব মিলিয়ে দেশজুড়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রায় ৩৩ লাখ ২৫ হাজার আসন রয়েছে। যার বিপরীতে সাড়ে ২০ লাখের বেশি আসন এই বছর খালি থাকতে পারে।
শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেই শুরু হবে আবেদন কার্যক্রম এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ক্লাস শুরুর লক্ষ্যে তিন ধাপে আবেদন ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
Array