অর্থনীতি ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোর প্রভাবে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি আয় ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে। রোববার (৫ অক্টোবর) প্রকাশিত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই পতনের ফলে দেশের সামগ্রিক রফতানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৩৯ মিলিয়ন ডলারে। নিটওয়্যার ও ওভেন—উভয় খাতেই প্রবৃদ্ধি নেমে গেছে ঋণাত্মক পর্যায়ে। নিটওয়্যার রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এর আগে আগস্ট মাসেও পোশাক রফতানি আয় কমেছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জুলাইয়ে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, পরের দুই মাসে টানা পতন দেখা যায়। ফলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে অস্বাভাবিক ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা অতিরিক্ত ট্যারিফের কারণেই আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। জুলাই পর্যন্ত বায়াররা (ক্রেতারা) নিশ্চিত ছিল না, ট্যারিফ কত হবে। তাই তারা আগাম বেশি পণ্য কিনে নিয়েছিল। পরে যখন বাড়তি শুল্ক কার্যকর হয়, তখন নতুন অর্ডার কমে যায়।”
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, ক্রেতারা এখন খরচ সামাল দিতে অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। “২০ শতাংশ অতিরিক্ত ট্যারিফের ব্যয় তারা পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে মেটাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্ডার কমেছে এবং সেটি সরাসরি রফতানিতে প্রভাব ফেলেছে।”
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “রফতানিকারকদের ওপর ২০ শতাংশ রেসিপ্রোক্যাল শুল্কের অংশ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা বহন করা সম্ভব নয়। উৎপাদন ব্যয়, কাঁচামালের দাম ও মুদ্রাবিনিময় হারের চাপে রফতানিকারকরা ইতিমধ্যে বিপাকে আছেন।” তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাজারেও বাংলাদেশের রফতানিকারকরা এখন চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকদের কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে অনেক ক্রেতা আগেই পণ্য কিনে নিয়েছিল। “জুলাইয়ের বড় প্রবৃদ্ধির পেছনে সেই আগাম ক্রয়াদেশই প্রধান কারণ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের অর্ডার আগেই দেওয়া থাকায় তখন শুল্কের বাস্তব প্রভাব দেখা গেছে। আগামী কয়েক মাসে এই প্রভাব আরও স্পষ্ট হতে পারে।”
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারের অনিশ্চয়তা এবং ট্যারিফ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নির্ধারণ না হওয়ায় অর্ডার কমে গেছে। “পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে আরও কিছু সময় লাগবে। তখন বোঝা যাবে বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্য কাঠামো কতটা সুবিধাজনক হবে।”
রফতানি খাতের নেতারা মনে করছেন, চলতি ধীরগতি অন্তত আগামী দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ক্রেতারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, তাহলে বছরের শেষ প্রান্তিকে রফতানি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পোশাক রফতানির প্রধান দুই বাজার। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের বৃহত্তম ক্রেতা—দেশটিতে বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ পোশাক রফতানি হয়ে থাকে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপের পর থেকেই ক্রেতারা বিকল্প বাজারে অর্ডার স্থানান্তর করছে, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য নতুন চাপ তৈরি করেছে।
Array