অনলাইন ডেস্ক: বিখ্যাত নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘দেয়াল’ উপন্যাসের অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘এক নবদম্পতি গাড়িতে করে যাচ্ছিল। টঙ্গীর তৎকালীন (দেশ স্বাধীনের পরই) আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়িটি আটক করে। ড্রাইভার আর নববধূর স্বামীকে হত্যা করে, মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। অতঃপর তিন দিন পর তার লাশ পাওয়া যায় টঙ্গি ব্রিজের নিচে। পৈশাচিক এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। বিশেষ অভিযানে দায়িত্বরত মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল ধরা পড়ে। মোজাম্মেল মেজরকে বলে- ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন, আপনাকে তিন লাখ টাকা দেব। বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাব। আপনি পড়বেন বিপদে। আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না।’
মেজর নাসের বললেন, ‘এটা তুচ্ছ বিষয়? মোজাম্মেল জবাব দিল না, উদাস চোখে তাকাল। মেজর নাসের বললেন, আমি অবশ্যই তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার ব্যবস্থা করব। তোমার তিন লাখ টাকা তুমি তোমার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে রাখো! মোজাম্মেল বলল, দেখা যাক। মোজাম্মেলের বাবা, দুই ভাই গেল বঙ্গবন্ধুর কাছে। ঘরে ঢোকা মাত্র মোজাম্মেলের বাবা ও দুই ভাই কেঁদে বঙ্গবন্ধুর পায়ে পড়ল। টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতিও পায়ে ধরার চেষ্টা করলেন কিন্তু পা খুঁজে পেলেন না। পা মোজাম্মেলের আত্মীয়স্বজনের দখলে! বঙ্গবন্ধু বললেন, ঘটনা কী বল? টঙ্গী আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, আমাদের মোজাম্মেলকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। মেজর নাসের তাকে ধরেছে। নাসের বলেছে, তিন লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দিবে। মিথ্যা মামলাটা কি? মোজাম্মেলের বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, খুনের মামলা লাগায়া দিছে।
টঙ্গী আ.লীগের সভাপতি বললেন, এই মেজর আ.লীগের নাম শুনলেই তারাবাতির মতো জ্বলে ওঠে। সে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, টঙ্গীতে আমি কোনো আ.লীগের শূয়োর রাখব না। বঙ্গবন্ধু, আমি নিজেও এখন ভয়ে অস্থির! টঙ্গীতে থাকি না। ঢাকায় চলে আসছি। বঙ্গবন্ধু বললেন, কান্দিস না। কান্দার মতো কিছু ঘটে নাই। আমি এখনো বাইচ্যা আছি তো, মইরা যাই নাই। এখনি ব্যবস্থা নিতাছি। তিনি মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিক ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং মেজর নাসেরকে টঙ্গী থেকে সরিয়ে দেবার জরুরি আদেশ দেয়া হলো। মোজাম্মেল ছাড়া পেয়ে মেজর নাসেরকে তার বাসায় পাকা কাঁঠাল খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছিল।
Array
