• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • পোশাকশিল্পে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড: নাশকতার গন্ধে শঙ্কিত দেশ 

     dweepojnews 
    20th Oct 2025 8:12 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    দেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিত নাশকতার আশঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। সর্বত্র একটিই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কি এবার টার্গেট করা হয়েছে দেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পকে? গত এক সপ্তাহে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ধরন ও প্রেক্ষাপট সেই সন্দেহকে আরও দৃঢ় করেছে। শিল্পমালিকদের ধারণা, দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে গার্মেন্টস শিল্পে আগুন লাগানো হচ্ছে—যা এই খাতকে ধ্বংসের জন্য ভয়াবহ অপচেষ্টা হতে পারে। ফলে শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর দাবি উঠেছে সব মহল থেকেই।

    পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারকে সঠিক তথ্য দিতে তৎপরতা জোরদার করেছে।

    একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী শক্তিগুলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে তারা বিভিন্ন পন্থায় একের পর এক আঘাতের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। সেই সময় সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকায় গুজব ছড়িয়ে বহু কারখানা ভাঙচুর করা হয়, যা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় প্রতিহত হয়। তবে দেশবিরোধী চক্রটি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে তিনটি অগ্নিকাণ্ড—যেগুলো সবই গার্মেন্টস ও শিল্পসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় ঘটেছে—সেই আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে। বিদেশে বসে সরকারবিরোধী হুমকি দেওয়া কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে এসব ঘটনার যোগসূত্র থাকার যুক্তিও খণ্ডন করা যাচ্ছে না।

    গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের শিকার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের রাজনৈতিক পরিচয় ও নানামুখী সংযোগ খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশবিরোধী কিছু মহল দীর্ঘদিন ধরেই দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি নষ্টে তৎপর। শ্রমিক নিরাপত্তা, মজুরি, কর্মপরিবেশ ও ট্রেড ইউনিয়ন ইস্যুতে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে, যার ধারাবাহিকতা হতে পারে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডগুলোও।

    এমনকি গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, কিছু গার্মেন্ট মালিকও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন—যারা অতীতে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ শ্রমিক আন্দোলন উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানা যায়।

    ঘটনাগুলোর ভয়াবহতা বিবেচনায় এখন প্রশ্ন উঠছে—এসব নিছক দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত নাশকতা? ১৪ অক্টোবর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আগুনে ১৬ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু, ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম ইপিজেডে পোশাক কারখানায় আগুন, এবং সর্বশেষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড—সবগুলোই সন্দেহজনক প্রেক্ষাপটে ঘটেছে।

    বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, এমন সংবেদনশীল স্থানে আগুন লাগা নিরাপত্তার বড় প্রশ্ন তোলে। তিনি সরকারের দ্রুত তদন্ত দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড উদ্যোক্তাদের মনে ভয় সৃষ্টি করেছে, যা বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।

    বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল আরও স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে ধ্বংসে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে।” তাঁর মতে, বিমানবন্দরের মতো উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় আগুন লাগা নিছক কাকতালীয় হতে পারে না। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে গতি আনার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শিল্পাঞ্চলে দ্রুত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন।

    বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খানও দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না হলে এই খাতের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার কঠিন হবে।

    বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শুধু অর্থনীতির মেরুদণ্ড নয়, লাখো মানুষের জীবিকার উৎস। তাই এই শিল্পকে লক্ষ্য করে যেকোনো নাশকতা বা ষড়যন্ত্র জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপই পারে এই চক্রকে চিহ্নিত ও দমন করতে। নইলে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত এবং এর সঙ্গে জড়িত কোটি মানুষের জীবিকা গভীর সংকটে পড়বে—যার দায়ভার গোটা জাতিকেই বহন করতে হবে।

    Array
    আমাদের পোস্টটি ভালো লাগলে স্যোসাল মিডিয়া শেয়ার করুন।
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১