• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • সৌরভ হিমেল এর সাইন্স ফিকশন : ডক্টর প্যারাডক্স ও লুংতিয়ার পাহাড় 

     dweepojnews 
    15th Jul 2025 11:06 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    ডক্টর প্যারাডক্স লুংতিয়ার পাহাড়

    _সৌরভ হিমেল

    পাহাড় এখনো ভোরের কুয়াশায় ঢাকা। সূর্য একটু একটু করে ঢেউয়ের মতো আলোর রেখা ফেলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির লুংতিয়ার পাহাড়ের টিলায়। পাখিদের ডাক, দূরে কোথাও বাঁশ কাটা মানুষের কুন্দালি আওয়াজ, আর পাতার ফাঁক দিয়ে পড়া রোদ যেন সময়কে খানিকটা ধীর করে দিয়েছে। এক দল শহুরে তরুণ-তরুণী— ছয়জন মিলে এসেছে এখানকার ট্রেইল ধরতে।

    তারা নিজেদের বলে “দ্য লস্ট প্যাথফাইন্ডারস”— অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী, কেউ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, কেউ আবার ডুকুমেন্টারীর জন্য ভিডিও বানায়। তাদের ব্যাকপ্যাকে পানি, শুকনো খাবার আর ক্যামেরা— মনে রয়েছে কৌতূহল, ক্লান্তির হাসি আর অজানার প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ।

    জঙ্গলের পথটা সিঁড়ির মতো ওঠানামা করে চলেছে। গা ছমছমে নির্জনতা চারপাশে ধীরে ধীরে ঘন হয়ে উঠছে— যেন সময়ও নিশ্বাস নিতে ভুলে যাচ্ছে। হঠাৎ যেন বাতাস বদলে গেল। মেহরাব হঠাৎ থেমে দাঁড়ায়। তার চোখ সরু হয়ে আসে।“ তোমরা কিছু টের পাচ্ছো না? কেউ আমাদের পেছন পেছন হাঁটছে… ”সবার গা ঠাণ্ডা হয়ে আসে কথাটা শুনে। তারা পেছনে তাকায়— শুধু ছায়া। গাঢ় সবুজ ছায়া।

    কোনো মানুষ নেই, অথচ তাদের অনুভূতি তীব্র— কেউ আড়াল থেকে দেখছে তাদের। রাফির মুখটা কেমন ফ্যাকাশে। সে বলে, “আমি কানের পাশ দিয়ে একটা শ্বাস পড়ার শব্দ শুনেছি। ঠিক যেন কেউ খুব কাছে এসে…” বনভূমির মধ্যেকার আলোর ফাঁকগুলো কেমন গাঢ় হতে থাকে।পাখিরাও থেমে গেছে।

    কেউ কথা বলছে না, কারণ কিছু বলা যাচ্ছে না। মিথিলা ফিসফিস করে বলে, “চলো… একটু সামনে গিয়ে দেখি… যদি কেউ থাকে।” ঘন জঙ্গলের প্রান্তে পা দিয়েই গাইড আচমকা থেমে গেল।

    তাদের গাইড ফিসফিস করে বলে— স্যার আর সামনে যাওয়া যাবেনা। ওদিকে যাওয়া মানা আছে। সে ধীরে ধীরে পিছন ফিরে বলল,” এই জায়গাটার পরে আর যাওয়া ঠিক না, স্যার। ওদিকে হইল কেলদের রাজ্য… হরিকেল। পুরান লোকেরা বলে, এই বনে এক জাতি বাস করত যারা মানুষ না, আবার জানোয়ারও না। চোখ গুলো আঁঙ্গারে মতো, আর ওদের হাসি শুনলে মানুষ পাগল হইয়া যায়।”

    দলে থাকা একজন: তোমরা তাহলে ওইদিকে যাবা না, নাকি?

    গাইড (চোখ নিচু করে): গেলে জীবনটাই খোয়ান পড়ব। কেলরা এখন কম দেখা দেয়, কিন্তু কেউ যদি ভুল করে হরিকেলের ভেতর ঢুকে, ফিরা আর আসে না। শিশুর কান্না, গন্ধ, এসবের টান দিয়ে ওরা মানুষ ধরে।

    একজন নাজুক গলায়: “চাটি? কী চাটি?”

    গাইড: আগুন দিয়া বানানো এক চাটাই। বদর আউলিয়া একবার ওদের থাইকা একটা ছোট্ট জায়গা নিয়েছিলো। ওদিন কেলরা হেরে গেছিল, কিন্ত তারা নাকি প্রতিজ্ঞা করছিল— আবার ফিরবে। আর যত শিশু ধরা যায়, সব নেবে। এখনো সন্ধ্যার সময় ওদিকে গেলে বাচ্চাদের কন্দোনের আওয়াজ পাওয়া যায়।

    তাদের সবার গা শিউরে উঠল। তারা সাবধানে ফেরত আসতে থাকে— বাঁশঝাড়ের এক সরু ফাঁক দিয়ে। ঘন ছায়ার মধ্যে হঠাৎই তারা দেখতে পায় এক গুহার অন্ধকার। গাইড ফিশফিশিয়ে বলল দ্রুত হাটুন, পারলে দৌড়ান, এটা কেলদের গুহা। চারপাশটা ঠাণ্ডা, ঘাম জমা বাতাসে ভরে আছে। এক পাশে একটি পাথরের ফলক, যার লেখা অর্ধেক ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে। ওটায় একজনের পা লেগে পড়ে গিয়ে একজন অজ্ঞান হয়ে যায়। বাকি সবাই আতঙ্কে ছুটতে থাকে— কেউ পেছনে তাকায় না।

    গাইড চিৎকার করে বলছিল, “না তাকাইয়া দৌড়ান! চোখে চোখ পড়লে নিয়া যাইবো ওরা!” তারা একটানা ছুটে এসে পৌঁছে যায় কাছাকাছি সেনাবাহিনীর একটি পাহাড়ি ক্যাম্পে। অজ্ঞান ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে রাতভর তল্লাশি চলে। স্থানীয় মানুষ ও সেনাবাহিনীর যৌথ তৎপরতায় শেষমেশ তাকে জীবিত পাওয়া যায়— কিন্তু সে যেন বদলে গেছে। কথা বলতে পারছে না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ।

    এতক্ষণ গাড়ির পেছনের আসনে বসে রিপোর্টগুলো আবার পড়ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাডভান্সড সায়েন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ইনোভেশন ল্যাবরেটরি- এর প্রধান বিজ্ঞানী ডক্টর প্যারাডক্স। তার আসল নাম ডঃ হাবিব। গাড়ির গ্লাসের ওপাশে ছুটে চলা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ, ডেকে চলেছে এক অজানা অধ্যায়ের দিকে। গন্তব্য: লুংতিয়া, খাগড়াছড়ি। বাংলার লোককাহিনিতে কেল ও বদর পীরের ঘটনার উল্লেখ আছে। কিন্তু দুম করে একবিংশ শতাব্দীতে কেল জাতির ফিরে আসা এটা ঠিক ডক্টর প্যারাডক্সের হজম হচ্ছেনা।

    ডক্টর প্যারাডক্সগাড়ির দরজা খুলতেই ভেজা ঠান্ডাহিমেল বাতাসের এক ধাক্কা লাগল শরীরে। ডক্টর প্যারাডক্স— পা রাখলেন লুংতিয়ার কাঁদা-পাথুরে মাটিতে। ঘন জঙ্গল, মাথার ওপর পাহাড় ঝুঁকে আছে। কাঁধেআর হাতে নিলেন কিছু যন্ত্রপাতি বোঝাই ব্যাগ। দূরে কোথাও পাখির ডাক আসছে। তিনি ধীরে ধীরে এগোলেন। জুতার নিচে শুকনো পাতার শব্দ বাতাসে মিশে অদ্ভুত রকম প্রতিধ্বনি তুলছিল। বেশ অনেক্ষন হাঁটার পর গাছের ফাঁক দিয়ে তা দেখা দিল, একটা গুহা।

    অন্ধকারে ঢেকে থাকা মুখ, ঠিক যেন কেউ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চুপচাপ হা করে তাকিয়ে আছে এই পৃথিবীর দিকে। গুহার চারপাশে শ্যাওলা জমে গেছে। ডক্টর প্যারাডক্স থেমে গেলেন। হাতের ব্যাগগুলো শক্ত করে ধরে রাখলেন বুকে। যেন সেই যন্ত্রগুলোই তাঁকে রক্ষা করবে এই অজানা কিছুর কাছ থেকে। গুহার দু’পাশে মাটির গায়ে খোদাই করা দাগ। পুরনো ভাষা, তার কিছু অংশ তিনি চিনলেন। তিনি ফিসফিস করে বললেন, “এটা… কোনো গুহা না। এটা একটা দরজা।” ডক্টর প্যারাডক্স গুহার দিকে তাকিয়ে। গুহার ভেতর থেকে যেন কেউ তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকেই। এবার ডক্টর প্যারাডক্স দুটো যন্ত্র স্থাপন করলেন।

    VITA-7 (Vitality Tracking Array -Model 7) । “VITA-7” সক্রিয় করলে স্ক্রিনে ভেসে উঠবে গুহার ভেতরের যে কোনো অচেনা প্রাণঘন সিগন্যাল। এরপর স্থাপন করলেন NEOSCAN (Neuro-Energetic Organic Scanner)। এই যন্ত্রটি  খানিকটা রাডারের মত, যেকোন প্রানের অনুকম্প ও স্ক্যান করে ফেলতে পারে, যাপ্রাণঘন কণার (Bio-Energetic Particle) নড়াচড়া শনাক্ত করতে সক্ষম। এটি আশেপাশে দুই কিলোমিটারের ভেতর যে কোনো জীবিত কিছুর— মানুষ, প্রাণী এমনকি অজানা প্রাণী বা অদৃশ্য সত্তারও—উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।

    যন্ত্রগুলো বাংলাদেশ অ্যাডভান্সড সায়েন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিকইনোভেশন ল্যাবরেটরির (BASSIL) তৈরি। ডক্টর প্যারাডক্স যন্ত্র চালু হবার কিছুক্ষনের মাঝে NEOSCAN যন্ত্রে একজন মানুষের উপস্থিতি দেখলেন , তার ঠিক মাথার উপরের টিলায় শুয়ে আছে মানুষটি , তার দিকে ফিরে। হাতে বৃহৎ ধাতব কিছু আহে সেটাও বুঝা যাচ্ছে। হঠাৎ যন্ত্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। কোন যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য হয়ত এমন হয়েছে। ডক্টর প্যারাডক্স যন্ত্রগুলো ঠিক করার জন্য কীপ্যাডের বোতামগুলো টিপছে বারবার। এদিকে তার মাথার উপরের টিলায় কে আছে এটা নিয়েও চিন্তা করছে।

    তখনই পেছন থেকে একটা শব্দ শুনলেন। ওগুলো জ্যাম হয়ে গিয়েছে ডক্টর, মাই ওল্ড ফ্রেন্ড- অচেনা আগন্তুক পেছন থেকে বলল। ডক্টর প্যারাডক্স পেছন ফিরে দেখলো একজন আগন্তুক, তার হাতে বৃহদাকার ব্যারেটএম সিক্সটিন স্নাইপার রাইফেল। আলোর জন্য স্পষ্ট ভাবে তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলোনা। আগন্তুক এগিয়ে এলে ডক্টর প্যারাডক্স আগন্তুককে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো, তারপর হাফ ছেড়ে হালকা হেসে বললেন, ও ডেভেনফোর্ড তুমি? অবশ্য বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই গুহার ওপর নজর রাখবে সেটা জানা ছিলো।

    তাই বলে তাদের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ আন্ডারকাভার এজেন্ট মেজর ডেভেনফোর্ডকে স্নাইপার দিয়ে এইখানে বসিয়ে দিলো! বাহ ! আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ডেভেনফোর্ড তোমার আসল নাম জানার । ডেভেনফোর্ড নামের কোড নেম টা আর ভালো লাগেনা। কেমন যেনো পর্দার চরিত্র মনে হয়, ভারিক্কি মত শোনাযায়। ডেভেনফোর্ড বলল, বাজে বকো না তো। আমি এখানে নিউরোস্ক্র্যাম্বলার নামক যন্ত্র বসিয়েছি।

    আমার ধারণা এখানে কোন কোন অপরাধীর দল কোন অপরাধ করছে, তাছাড়া এখানে অনেক রেয়ার মেটাল পাওয়া যায়। তাই আমার ধারণা এখানে হয়ত কেউ চুপিচুপি মাইনিং করছে। আর কেল জাতির গুজব ছড়িয়ে সবাইকে দূরে রাখছে। তাই ইলেক্ট্রকিন্স যন্ত্রের ফ্লিকোয়েন্সি ধরার জন্য ও জ্যাম করতে আমি এখানে নিউরোস্ক্র্যাম্বলার বসিয়েছি। তাই তোমার যন্ত্রগুলোও জ্যাম হয়ে গিয়েছে।

    কারণ আমি কিছু অনিয়মিত সিগন্যাল পেয়েছি মাটির ১৫০০ ফুট নিচ থেকে। এটা প্রায় অসম্ভব-ডক্টর প্যারাডক্স বললেন। কারন মাটির অত নিচে মাইনিং অসম্ভব তাও এই পাহাড়ি জায়গায়। ডেভেনফোর্ড বলল, ওকে দেখা যাক কি হয়, এখানে না দাঁড়িয়ে উচু টিলার উপর চলো। এখানে কি না কি হয়। বিপদ তো বলে কয়ে আসেনা।

    ডক্টর প্যারাডক্স ধীরে ধীরে উঁচু টিলার দিকে উঠতে লাগলেন। পাথুরে, কাঁদা মাটির ঢালুতে পা পিছলে যাচ্ছিল মাঝে মাঝে, কিন্তু অভিজ্ঞতার অভ্যাসে সেই দুর্ভাবনাকে পাত্তা দিলেন না। উপরের দিকে উঠতেই বাতাসটা আরও কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা লাগছে তার। টিলার চূড়ায় উঠে তিনি চমকে গেলেন। চূড়াটিকে অস্থায়ী এক যুদ্ধঘাঁটিতে পরিণত করেছে মেজর ডেভেনফোর্ড। চারপাশে বসানো রয়েছে নানান যন্ত্রপাতি।

    পাহাড়ের কিনার বরাবর ছড়ানো হয়েছে কনসিল্ড নিউরোস্ক্র্যাম্বলার– এমনভাবে রাখা যেন সহজে চোখে না পড়ে, কিন্তু কার্যক্ষমতায় সন্দেহ নেই। ডেভেনফোর্ড তার কাজে নিখুঁত, এবং তাকেই গোটা মিশনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পাঠানো হয়েছে।

    একপাশে একটি স্যাটেলাইট ফোন, তার পাশেই রয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নাইট ভিশন ক্যামেরা ও থার্মাল ইমেজিং সেন্সর— যা গুহার অভ্যন্তরে কিংবা জঙ্গলের ভেতর যেকোনো তাপ-সৃষ্ট জীবনের অস্তিত্বের সংকেত শনাক্ত করতে পারে, এমনকি পাথরের আড়ালেও। আরেক কোণে সাজানো আছে আগ্নেয়াস্ত্র।

    একটি কমপ্যাক্ট মেশিনগান। তার পাশেই রাখা আছে ভাঁজ করে রাখা একটি MANPADS— Man-Portable Air-Defense System, একধরনের এন্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল, যা হেলিকপ্টার কিংবা ড্রোন যেকোনো আকাশি হুমকি নিমিষে ধ্বংস করতে পারে। মাটিতে বসানো হয়েছে তার ট্রিপড। চারদিকে তার লাগানো তার, সেন্সর আর নজরদারি।

    ডক্টর প্যারাডক্স নিঃশ্বাস ফেললেন। এ দৃশ্য যেন তাকে এক অদ্ভূত  অনুভবের মধ্যে ফেলে দিল— বিজ্ঞান, যুদ্ধ এবং গুপ্তচরবৃত্তি— তিনটি জগত এক বিন্দুতে এসে মিলেছে। তিনি ডেভেনফোর্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি এখানে একটা আস্ত ব্যাটেলফিল্ড বানিয়ে ফেলেছো। কিন্তু যাদের খুঁজছো, সে কি এসব যন্ত্রে ধরা দেবে?” ডেভেনফোর্ড ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি টেনে বলল, “যদি ধরা না দেয়, তবে সেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকেত— কারণ কোনো কিছুই পুরোপুরি অদৃশ্য হয় না, যদি না সে… মানুষ না হয়। ”রাতের অন্ধকারই আমাদের আসল সুযোগ, প্যারাডক্স। অপেক্ষা করো। রাত গভীর হলে, সব সেন্সর একসঙ্গে চালু করব— তখনই আমরা বুঝতে পারব, কী লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ের তলদেশে।”

    তখন গভীর রাত, আকাশে মেঘের চাদর পুরু হয়ে নেমে এসেছে। দূরের গাছপালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে জোনাকির আলো টিমটিম করছে। প্যারাডক্স ও মেজর ডেভেনফোর্ড চুপচাপ সেন্সরের মনিটরে তাকিয়ে আছে। কিছু একটার সিগন্যাল ধরা পড়ছে। কিন্তু সেটা স্পষ্ট নয়, অনিয়মিত, বিক্ষিপ্ত ভাবে, হঠাৎ ডেভেনফোর্ড ও প্যারাডক্স মৃদ্যু কম্পন অনুভব করলেন। কম্পনটা ক্রমশ বাড়ছে। হঠাৎই তারা দু’জনেই অনুভব করলেন মাটির নিচে মৃদু কাঁপুনি। পাথরের নিচে যেন কিছু নড়ে উঠেছে। সেই কম্পনটা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল— প্রথমে মাটি, তারপর চারপাশের বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠল।

    ডেভেনফোর্ড তার কোমরে থাকা ডেজার্ট ইগল পিস্তলটি প্যারাডক্স- এর দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল ডক্টর। নিজের খেয়াল রেখো । ডেভেনফোর্ড  নিজেও ব্যারেট এম সিক্সটিন স্নাইপার রাইফেল নিয়ে গুহার মুখ বরাবর শুয়ে পড়লো। হঠাৎ গুহার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো এক লম্বা আকাশ যান। একদম নিশব্দে বেরিয়ে এলো। আকাশ যানের পেছনে সাদা আগুনের হলকা বের হচ্ছে। প্যারাডক্স লক্ষ্য করলো তাদের সব যন্ত্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ডক্টর প্যারাডক্স এক ঝলকে চারপাশ দেখে বুঝলেন— তাদের সব যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেছে। VITA-7, NEOSCAN, এমনকি সেন্সর লিংকড স্যাটেলাইট কানেকশন— সব নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ।

    আকাশযানটা স্থির উড়ছে। মনে হচ্ছে কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষনেরর মাঝে আকাশে বিশাল বড় আরেকটা আকাশ যান দেখা গেলো। আকারে একটি ছোট পাহাড়ের সমান, কালো রঙা। সেটি নিঃশব্দে ভাসছে আকাশের গহ্বরে। প্যারাডক্স ও ডেভেনফোর্ড এক সঙ্গে বলে উঠলো, মাদার শিপ! ছোট আকাশযানটি ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে বড় মহাকাশ যানের নিচের একটি খোলা প্রবেশদ্বারে ঢুকে গেল। তখন বড় আকাশযানটা নিজ অক্ষের উপর ঘুরে যেন দিশা ঠিক করলো গন্তব্যের। তৎক্ষণাৎ, সেটি নিঃশব্দে সরতে শুরু করল।

    তারপর— এক ঝলকে, তার বিশাল শরীরটা দূরের আকাশে মিলিয়ে গেল।

    প্যারাডক্স ও ডেভেনফোর্ড একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে উঠলেন। চারপাশে আবারও নেমে এসেছে জঙ্গল ঘেরা রাতের নিস্তব্ধতা। ডেভেনফোর্ড নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমার ফাইলে আমি লিখব— এখানে কিছুই পাওয়া যায়নি। তুমি কী লিখবে, ডক্টর?” প্যারাডক্স চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, “আমিও একই লিখব। তবে কাজ এখানেই শেষ নয়, ডেভেনফোর্ড।”

    সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জায়গায় নাকি… ক্রপ সার্কেল দেখা যাচ্ছে। “ডেভেনফোর্ড কপাল কুঁচকে তাকাল, “ক্রপ সার্কেল? ওটা আবার কী?” “ডক্টর প্যারাডক্স ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বললেন,” “ক্রপ সার্কেল হলো মাঠের ফসল কেটে বা চেপে তৈরি করা জ্যামিতিক আকৃতি। বেশিরভাগ সময় এগুলো রহস্যময়— এবং অনেকেই মনে করেন, এগুলো ভিনগ্রহবাসীর বার্তা হতে পারে।” ডেভেনফোর্ড ঠোঁট উলটে হেসে বলল “মহাকাশ থেকে যদি কেউ আমাদের ধানক্ষেতে ছবি আঁকে, তাহলে তো আমাদেরও জবাব দেওয়া উচিত!” তারপর গম্ভীর গলায় বলল, “ব্যাগপ্যাক গোছাও, প্যারাডক্স। দ্রুত ঢাকায় ফিরতে হবে।”

    Array
    আমাদের পোস্টটি ভালো লাগলে স্যোসাল মিডিয়া শেয়ার করুন।
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১