আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ধসের কারণে উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে সিকিম রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, দুর্গাপূজার ছুটিতে কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক দার্জিলিং ভ্রমণে গিয়েছিলেন, অনেকে এখন এলাকায় আটকে পড়েছেন।
দার্জিলিংয়ের মিরিক ও সুখিয়াপোখরির মতো পাহাড়ি এলাকায় একাধিক স্থানে ধস নেমে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে, তবে টানা বৃষ্টির কারণে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ ও ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) দুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনা করছে।
পাহাড় ধসে দার্জিলিং-সিলিগুড়ি মহাসড়ক এবং সিকিমের সঙ্গে সংযোগকারী প্রধান রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষভাবে মিরিক ও দুধিয়া অঞ্চলের মধ্যে লোহার সেতু ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ত্রিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি এবং আরেকটি সেতুর ক্ষয়ক্ষতির কারণে সিকিম ও কালিম্পং জেলার প্রবেশও কঠিন হয়ে পড়েছে।
দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা জানিয়েছেন, বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের প্রাণহানি, সম্পত্তি ও অবকাঠামোগত ক্ষতি ঘটেছে। তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসন আটকে পড়া পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য জরুরি সহায়তা হটলাইন চালু করেছে।
গোরখাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) দার্জিলিংয়ের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র যেমন টাইগার হিল, রক গার্ডেনসহ সব পর্যটন স্থান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিখ্যাত ‘টয় ট্রেন’ সেবাও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, সিলিগুড়ি ও কোচবিহারেও ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বেই উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছিল। সিকিমে দুই দফা রেড ওয়ার্নিং জারি করা হয়েছে। বজ্রপাত, ঝোড়ো হাওয়া এবং ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা জানানো হয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে।
পরিবেশগত কারণে হঠাৎ বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর ভিডিওতে দেখা গেছে, সেতু ভেঙে গেছে, রাস্তা ভেসে গেছে এবং নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশ নেপালেও একই আবহাওয়াজনিত দুর্যোগে গত ৩৬ ঘণ্টায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “দার্জিলিংয়ে প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কেন্দ্র সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।” রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দার্জিলিং সফরে যাচ্ছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মিরিক, সার্সালি ও মিরিক বাস্টি এলাকার ধসে অন্তত সাতটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, দুজন এখনও নিখোঁজ। ত্রিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি ও ধসের কারণে প্রধান সড়কগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে।
Array