আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাত্রা করা ফ্রিডম ফ্লোটিলা নামের আন্তর্জাতিক নৌবহরটি আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম এই নৌবহরের একটি জাহাজে ছিলেন। আটক হওয়ার পর তিনি একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে “অপহরণ” করেছে এবং গাজায় প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানায়, গাজামুখী ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজ ও যাত্রীদের আটক করে ইসরায়েলি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানায়, “আইনি নৌ অবরোধ ভেঙে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে। সব যাত্রী নিরাপদ আছেন এবং তাঁদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।”
অন্যদিকে, ফ্রিডম ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের জাহাজগুলো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে এবং গাজা উপত্যকার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একাধিক জাহাজ আটক করা হয়েছে।
এই অভিযানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি ‘কনসেন্স’ নামের একটি জাহাজে ছিলেন, যা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের অংশ। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন,
“আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। আপনি যদি এই ভিডিওটি দেখে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে আমাদের সমুদ্রে আটক করা হয়েছে। আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আমি আমার সকল বন্ধুদের ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
শহিদুল আলমের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী, তাঁদের বহর বুধবার ভোর নাগাদ ‘রেড জোন’—অর্থাৎ বিপজ্জনক অঞ্চলের কাছাকাছি পৌঁছায়, যেখানে সম্প্রতি আরেকটি নৌবহর ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’কে আটক করেছিল ইসরায়েল। ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “আমরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছি, কারণ ধীরগতির জাহাজগুলোকে পেছনে না ফেলতে আমরা অপেক্ষা করেছি। এখন আমরা রেড জোন থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে।”
এর আগে, ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের আরেকটি নৌবহরের ৪০টিরও বেশি জাহাজ ও যাত্রীকে আটক করেছিল ইসরায়েল। তাদের মধ্যে ৪৭৯ জনেরও বেশি সদস্যকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা মূলত আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীদের নিয়ে গঠিত একটি শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ। এর লক্ষ্য ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
ইসরায়েলি বাহিনীর এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা বলছে, গাজায় প্রবেশের যে কোনো মানবিক উদ্যোগ ইসরায়েল “নিরাপত্তা”র অজুহাতে বন্ধ করে দিচ্ছে।
দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এই সময়ে দেশটির হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং অনেকেই বন্দী রয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রিডম ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের এই হামলা কেবল মানবিক সাহায্যকে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও সরাসরি আঘাত।
Array